বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ, উপমহাদেশের প্রখ্যাত চিকিৎসক এবং বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি
অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিগত ১৩ জুলাই গুরুতর হৃদরোগ নিয়ে তার নিজের প্রতিষ্ঠিত উত্তরাস্থ মহিলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তার অবস্থার উন্নতি হলেও তিনি এখনো চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ২ আগস্ট ২০২৪ সন্ধ্যাবেলায় তিনি দলের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের সাথে আলোচনা করেন এবং জাতির এই ক্লান্তিলগ্নে নিম্নক্ত বিবৃতি প্রদান করেন:
বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী যে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের সূচনা করেছে তা গত জুলাই মাসের ১৬ তারিখ থেকে একটি দুঃখজনক রক্তক্ষয়ী ঘটনা প্রবাহের জন্ম দিয়েছে যা এখনো বিরাজমান। গোটা জাতি আজ রক্তাক্ত এবং শোকে মুহ্যমান। একথা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে, আমাদের নিজেদের দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আমাদেরই সন্তানদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ছে এবং শত শত ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ জনগণকে হত্যা করেছে। এমনকি ছোট শিশুরাও এই নৃশংস হত্যাযজ্ঞ থেকে রেহাই পায়নি। হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং এই নির্যাতন এখনো চলমান।
আমি দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলতে চাই, আমাদের সন্তানদের গুলি করে হত্যা করা একটি ক্ষমাহীন অপরাধ এবং কোন রাজনৈতিক দোহাই দিয়ে এটাকে গ্রহণযোগ্য করার কোন সুযোগ নেই। জাতিকে রক্ষা করা সকল নাগরিকের দায়িত্ব। আমাদের মনে রাখতে হবে – রাজনীতি, দল, সরকার অথবা ক্ষমতা কোন কিছুই আমাদের সন্তানদের জীবনের থেকে অধিক মূল্যবান নয়। আমি দেশের সুশীল সমাজ, সকল পেশাজীবী এবং সর্বস্তরের জনসাধারণকে ছাত্রদের পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
একজন চিকিৎসক হিসেবে দেশের সকল চিকিৎসককে সর্বপ্রকার চিকিৎসা সেবা নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করছি। যেকোন মূল্যে এবং যেকোনো ত্যাগের বিনিময়ে আমাদের সন্তানদের বাঁচাতে হবে।
আমি আবারও সরকারকে মনে করিয়ে দিতে চাই , রাজনীতি, দল, সরকার বা ক্ষমতা কোন কিছুই আমাদের সন্তানদের জীবনের থেকে অধিক মূল্যবান নয়। আমি মনে করছি, এই মুহূর্তেই এ অবস্থার অবসান হওয়া জরুরী এবং এই দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে সরকারের।
আমরা আর একটিও প্রাণহানি, এক ফোটা রক্তপাতও দেখতে চাই না। ক্ষমতা প্রদর্শন নয় বরং দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়ে ছাত্রদের সকল দাবি নিঃশর্তভাবে মেনে নিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করুন এবং সকল হত্যাকাণ্ডের বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে বিচার সুনিশ্চিত করুন।