রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ফাঁসের মামলায় খালাস পেয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং তার রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহ মেহমুদ কুরেশি। সোমবার রাজধানী ইসলামাবাদের হাইকোর্ট (আইএইচসি) এক রায়ে আলোচিত এই মামলা থেকে দু’জনকে রেহাই দিয়েছেন।
এই মামলায় গত ৩০ জানুয়ারি ইমরান খান ও শাহ মেহমুদ কুরেশিকে ১০ বছর কারাবাসের সাজা দেন দেশটির নিম্ন আদালত। পরে ওই রায় বাতিল চেয়ে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে আপিল করেন পিটিআইয়ের আইনজীবীরা।
সোমবার সেই আবেদনের ওপর শুনানি ছিল। শুনানি শেষে সংক্ষিপ্ত রায়ে ইমরান-কুরেশিকে মামলা থেকে মুক্তি দেন আইএসইচসির বিচারপতি আমের ফারুক ও বিচারপতি মিয়াগুল হাসান আওরঙ্গজেবের সম্মিলিত বেঞ্চ।
ইমরানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় গোপনীয় তথ্য ফাঁস সংক্রান্ত বিতর্ক শুরু হয় ২০২২ সালের ২৭ মার্চ; তার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ হারানোর প্রায় ২ সপ্তাহ আগে। ওই দিন এক জনসভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় একটি চিঠি দেখিয়ে ইমরান খান বলেছিলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা বাইরের দেশের সরকারের সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে মেতেছেন এবং এই চিঠিতে তার প্রমাণ রয়েছে।
তবে জনসভায় চিঠিটি পড়েননি ইমরান কিংবা চিঠিতে কী রয়েছে— সে সম্পর্কে কোনো ইঙ্গিত দেননি; কিন্তু বিরোধীদলীয় এমপিদের অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কয়েকদিন পর ১০ এপ্রিল এক জনসভায় ইমরান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী দক্ষিণ ও মধ্য-এশিয়া বিভাগের প্রধান ডোনাল্ড লুর সঙ্গে সেই দেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের একটি বৈঠক হয়েছিল। সেই বৈঠকে ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে প্রস্তাব করেছিলেন ডোনাল্ড লু।
ইমরানের ভাষ্যমতে, লু বলেছিলেন— ইমরান খানকে যদি ক্ষমতাচ্যুত করা হয়, তাহলে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধান বিরোধীদল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএলএন) চেয়ারম্যান নওয়াজ শরিফসহ দলের অন্যান্য জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে যেসব দুর্নীতির অপরাধ আদালতে বিচারধীন রয়েছে, সেগুলো মিটিয়ে দেওয়া হবে।
তবে যুক্তরাষ্ট্র এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করায় ব্যাপারটি সেখানেই থেমে যায়। ইমরান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন পিএমএলএনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং নওয়াজ শরিফের ছোটভাই শেহবাজ শরিফ। তিনিও দীর্ঘ সময় ব্যাপারটিতে গুরুত্ব দেননি।
কিন্তু ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয় চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে। ওই সময় ইমরান খান, পিটিআইয়ের ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মুহম্মদ কুরেশি ও সেক্রেটারি জেনারেল আসাদ ওমরের দু’টি অডিও টেপ ফাঁসের পর দেশটির রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়। সেই অডিও টেপে ওই তিনজনকে আলোচনা করতে শোনা যায় যে, ওই চিঠিটি থেকে পিটিআই কীভাবে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে পারে।
তারপর ৩০ সেপ্টেম্বর তত্ত্বাবধায়ক মন্ত্রিসভা বিষয়টি তদন্তে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সিকে (এফআইএ) নির্দেশ দেয়। গত অক্টোবরে ইমরান ও কুরেশিকে অপরাধী সাব্যস্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয় এফআইএ। সেই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে ওই মাসেই এফআইএকে বিশেষ আদালতে ইমরান খানের বিরুদ্ধে মামলা করার অনুমতি দেয় নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক মন্ত্রিসভা।
মামলা দায়েরের তিন মাস পর ৩০ জানুয়ারি ইমরান ও কুরেশিকে দোষী সাব্যস্ত করে ১০ বছর কারাবাসের সাজা দেন নিম্ন আদালত; যা আজ (সোমবার) মওকুফ হলো। ইমরান এবং কুরেশি উভয়ই বর্তমানে কারাগারে আছেন। এই রায়ের ফলে তাদের কারাগার থেকে বের হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বর্তমানে তারা সাজা খাটছেন গত বছরের ৯ মে দেশজুড়ে সংঘটিত সহিংসতায় উসকানি দেওয়ার এক মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে।
সূত্র : ডন।