দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ অব্যাহতি দেওয়া জগন্নাথ বিশ্বিবদ্যালয়ের (জবি) মসজিদের ইমাম মো. ছালাহ উদ্দিনকে শুক্রবার জুমার নামাজ পড়ানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
জবির কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে ইমাম ছালাহ উদ্দিন জুমার নামাজ পড়িয়েছেন।
অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন জবি ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. মো. আইনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ইমাম মো. ছালাহ উদ্দিনকে সহকারী ইমামের সঙ্গে সমন্বয় করে নামাজ পড়াতে বলা হয়েছে। তবে তদন্ত চলমান থাকবে।
এর আগে জনসংযোগ অফিস থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মধ্যরাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) কেন্দ্রীয় মসজিদে ছাত্রীকে ঘুমন্ত অবস্থায় পাওয়ার ঘটনায় তদন্তের স্বার্থে তাকে ইমামতি থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ।তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে কোনো কোনো গণমাধ্যম খতিবকে অপসারণ করা হয়েছে বা অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বিষয়টি ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে, যা অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে গত ১৫ মে রাত ১১টা ২০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থীর অবস্থানের ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে মসজিদের ইমামসহ (খতিব) সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়ে তদন্তপূর্বক একটি নিরপেক্ষ প্রতিবেদন প্রদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কেন্দ্রীয় মসজিদ ও ইমাম ইস্যুতে একটি বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছিল। তাই আমরা বিষয়টি স্পষ্ট করলাম। তদন্ত শুরু হওয়ায় মৌখিকভাবে ইমামকে নামাজ পড়ানো থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছিল। অব্যাহতি দেওয়া হয়নি।
ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম লুৎফর রহমানকে আহ্বায়ক এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খালেদ সাইফুল্লাহকে সদস্যসচিব করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এদিকে ইমামকে অব্যাহতির প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ মিছিল করেন।
মিছিলটি শান্ত চত্বর হয়ে বিজ্ঞান অনুষদ প্রদক্ষিণ করার সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বাধায় শেষ হয়ে যায়। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের দাবির বিষয়ে কথা বলেন প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন।
এদিকে ইমামের অব্যাহতির বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিবাদ ও সমালোচনার ঝড় তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, মূল ঘটনার সূত্রপাত গত ১৭ মার্চ থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার মৃত্যুতে আত্মার মাগফেরাত কামনায় সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত মাহফিলে মসজিদের মিম্বরের পাশে নারী-পুরুষ সবাইকে এক সঙ্গে বসিয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন উপাচার্য সাদেকা হালিম। এ ঘটনার ছবি ভাইরাল হলে ঘটনাটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় কয়েকটি গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীরা ইমামকে প্রশ্ন করলে বক্তব্য দেন ইমাম সালাহ উদ্দিন। বক্তব্যে মসজিদে নারী-পুরুষ একত্রে বসা ইসলামি বিধানের লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেন তিনি। এরপর ইমামকে উপাচার্য দপ্তরে ডেকে নিয়ে তিরষ্কার করা হয়। এ ঘটনার জের ধরেই ইমামকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে বলে শিক্ষার্থীদের ধারণা।