নিরীহ ও রাজনৈতিক পলায়নপর মানুষের সম্পদ লুট করা কাপুরুষের কাজ বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। সেই সঙ্গে প্রতিশোধ পরায়ণ না হয়ে ইনসাফভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং মানুষের অধিকারের রক্ষায় কাজ করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে মিরপুর-১৩ প্রিন্স রেস্টুরেন্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ আহ্বান জানান।
জামায়াতের আমির বলেন, এত ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত দ্বিতীয় স্বাধীনতা… অথচ কিছু অপদার্থ লুটপাট, ভাঙচুর, জমি-অফিস দখল ও চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হয়েছে। বিভিন্ন অপকর্ম করছে। এরাই স্বাধীনতার শত্রু। আমি অনুরোধ করব, যেখানে পাবেন এদের হাত অবশ করে দিন, প্রতিহত করুন। কোনো সুযোগ দেওয়া যাবে না। এরা গণবিপ্লবকে ব্যর্থ করতে চায়।
তিনি বলেন, আমি ও আমার সহকর্মীরা ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করি না। অন্যরা যেভাবে ক্ষমতার মসনদে বসে রাজনীতি করেন, সে রকম কোনো রাজনীতি করি না। ক্ষমতার মসনদে বসার জন্যও আমরা রাজনীতি করি না। মানুষের সমস্যা সমাধানে আল্লাহই একমাত্র ভালো সমাধান দিতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, এখন হয়ত অনেকেই রাজনীতির ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে চিন্তা করছেন। আল্লাহর কসম, আমরা এসব নিয়ে চিন্তা করছি না। আমাদের অগ্রাধিকার হলো কীভাবে সমাজে রাষ্ট্রে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে আনা যায়। দ্বিতীয়ত হলো, এই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও খুব কাছ থেকে তাদের হৃদয়ের কথা শোনা, আমাদের কোনো কর্তব্য থাকলে সেটি করা। যারা হাসপাতালে কাতরাচ্ছে, তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা। আর চতুর্থ হলো, আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে আল্লাহর কাছে সেজদায় পড়ে সহযোগিতা চাওয়া। আল্লাহ যেন আমাদের একটা সুন্দর ও শৃঙ্খল সমাজব্যবস্থা দান করেন। আপাতত আমরা এসব করছি, আর এটাই এখন আমাদের রাজনীতি।
শফিকুর রহমান বলেন, আমরা শহীদ পরিবারকে শুধু বলতে চাই, আমরাও আপনাদের পরিবারের অংশ। আমরাও আপনার বুকের সমান অংশীদার। আজ থেকে আপনারাও আমাদের পরিবারের সদস্য হিসেবে দেখবেন। আমি পঙ্গু হাসপাতালে গিয়েছিলাম আহতদের চিকিৎসার খোঁজ নিতে। নার্সরা বলছিলেন আমরা এখন স্বাধীন। জবান এতদিন বন্ধ ছিল, এখন আমরা স্বস্তির সঙ্গে কথা বলছি। ডাক্তাররা বলছিলেন নামাজ পড়তে গেলেই ভিন্নভাবে দেখা হতো। একটা নার্স কেন ডিউটিতে নামাজ পড়ে, সে জন্য তাদের আলাদাভাবে দেখা হতো। এটা কী জাহান্নাম! পুরো দেশকে জাহান্নামে পরিণত করা হয়েছিল। এই ছাত্র সমাজ এমনিই ফুঁসে ওঠেনি। রক্ত এমনি তাদের গরম হয়নি। রক্ত গরম হলেও মাথা ঠান্ডা রেখে আন্দোলন করে আমাদের সন্তানরা সঠিক পথেই আন্দোলন করেছিল। তাদের জন্য আমরা গর্বিত।
তিনি বলেন, এ রকম একটা পটপরিবর্তনের পরে একটা সুযোগ সন্ধানী শ্রেণি বিভিন্ন ধরনের সুযোগ নেয়, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর জুলুম করে। আমরা জামায়াত ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের মাধ্যমে ঢাকাসহ সারা দেশে মন্দির, প্যাগোডা ও গির্জা পাহারা দিয়েছি।
জামায়াতের এই শীর্ষ নেতা বলেন, একজন পলায়নপর মানুষের সম্পদ নিয়ে টানাটানি তো কাপুরুষের কাজ। সে তার নিজের জায়গায় ফিরে আসুক, তারপর দেখব কত বড় বাহাদুর। তখন লড়াই করবেন। যারা এসব অপকর্ম করছে এবং আগে রাজনৈতিক অপকর্ম করছে তাদের প্রত্যেকের বিচার হবে।
এই গণ-আন্দোলনে যারা সরাসরি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের বিচার হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বৈধ হোক কিংবা অবৈধ, তিনি তো বলেছিলেন আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। সুতরাং আইন তার ব্যাপারেও প্রয়োগ হবে। সেই আইনে তিনি নির্দোষ হলে মুক্তি পাবেন। তিনি অবৈধ ক্ষমতায় সিংহাসনকে আঁকড়ে ধরে থাকার জন্য এতগুলো জীবন ঝরান। তিনি শান্তিপূর্ণভাবে চলে যেতে পারতেন, আজকে তাকে পালাতে হত না। অপমানজনকভাবে পালালেন, তার আগে রক্তের বন্যায় দেশকে ভাসিয়ে দিয়ে গেলেন। আজ সবাই তার বিচার চাইছে, আমরা বিচার চাই।
মতবিনিময়কালে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের আমির মো. সেলিম উদ্দিন এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমসহ অন্যান্যরা।