পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং দেশটির কিংবদন্তী ক্রিকেটার ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফকে (পিটিআই) নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার। শিগগিরই এ ইস্যুতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতা তারার।
সোমবার রাজধানী ইসলামাদে এক সংবাদ সম্মেলনে আতা তারার জানান, সংবিধানের ১৭ নম্বর ধারার ২ নম্বর উপধারা অনুযায়ী এ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘বিদেশি তহবিল গ্রহণ, ৯ মে’র দাঙ্গা, রাষ্ট্রের গোপন তথ্য ফাঁস এবং সেই সঙ্গে এ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টে নিন্দা প্রস্তাব ফাঁস— সব কিছু আমলে নিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
কী কারণে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে— সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের উত্তরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গত কয়েক বছরের ঘটনাপ্রবাহে যে ব্যাপারটি সরকার ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছে যে এই দলটি দেশের অগ্রযাত্রাবিরোধী। দেশ যদি সামনে এগোতে চায়…তাহলে পিটিআইকে সঙ্গে নিয়ে তা সম্ভব নয়।’
‘এ কারণেই সংবিধানের ১৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী আমরা পিটিআইকে নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছি। শিগগিরই সুপ্রিম কোর্টে এ ইস্যুতে প্রস্তাব পাঠানো হবে।’
পাকিস্তানের সংবিধানের ১৭ নম্বর ধারার ২ নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে, ‘পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষার স্বার্থে সরকারি চাকরিরতদের বাইরে যে কোনো নাগরিক রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারবেন।’
উপধারায় আরও বলা হয়েছে, ‘কোনো রাজনৈতিক দলের গঠন ও কার্যক্রম যদি দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার জন্য ক্ষতিকর হয়, তাহলে সেই দলকে নিষিদ্ধ করার ঘোষণা কেন্দ্রীয় সরকার দিতে পারবে। তবে এই ঘোষণা দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট বরাবর লিখিতভাবে এ প্রসঙ্গে অবহিত করতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে। তারপর সর্বোচ্চ আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবেন, তা ই কার্যকর হবে।’
প্রসঙ্গত, পাকিস্তানের বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেট অধিনায়ক থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ইমরান খান পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ গঠন করেন ১৯৯৬ সালে। তারপর ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে সামরিক বাহিনীর মদদে প্রথমবারের মতো দেশটির প্রধানমন্ত্রী হন।
তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রীদরে মতো তাকেও মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে বিদায় নিতে হয়েছে। ২০২১ সালে সামরিক বাহিনী পরিচালিত গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ানোর ৮ মাসের মধ্যে, ২০২২ সালের ১০ এপ্রিল পার্লামেন্টের বিরোধী দলীয় সদস্যদের অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি।
ক্ষমতা হারানোর পর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগে মামলা হতে থাকে। সেসব মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামী হিসেবে ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে কারাগারে আছেন ইমরান খান।
তিনি কারাগারে থাকা অবস্থাতেই ২০২৩ সালের নির্বাচনে অংশ নেয় পিটিআই। নির্বাচনে নিজেদের দলীয় প্রতীক ক্রিকেট ব্যাট ব্যবহারে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় পিটিআই প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতীক ব্যবহার করেন। পাকিস্তানের বর্তমান পার্লামেন্টে বিরোধী দল হলেও একক দল হিসেবে সবচেয়ে বেশি আসনে জয়ের কৃতিত্ব রয়েছে পিটিআইয়ের।
গতকাল রোববার পাকিস্তানের পার্লামেন্টের ৭০টি সংরক্ষিত আসনের ২৩টি পিটিআইয়ের জন্য বরাদ্দ করে রায় দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। তার পরের দিনই দলটি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত জানাল দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার।