মুন্সীগঞ্জের ৪ উপজেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগকে সহজ করার জন্য কেরানীগঞ্জের ধলেশ্বরীর শাখা নদীতে একটি সেতুর কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালে। তবে কয়েকদফায় মেয়াদ বাড়ানোর পরও কাজ শেষ হয়নি সেতুর। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন চার উপজেলার লাখো মানুষ।
সেতুটি সিরাজদিখান উপজেলা ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ধলেশ্বরীর শাখা নদীর ওপর নির্মিত হচ্ছে। ২০২৪ সালের জুন মাসে এসে কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৭০ ভাগ। সময়মতো কাজ শেষ করতে না পারায় কয়েক দফায় সময় বাড়ানো হয়। এরপরও কাজ শেষ হয়নি। আর গত ৪ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে মূল সেতুর কাজ। স্থানীয়রা বলছেন, সেতুটির কাজ শেষ হলে মু্ন্সীগঞ্জ থেকে ১ ঘণ্টায় ঢাকা যাওয়া যাবে।
কেরানীগঞ্জ এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, ৩৩ কোটি ২৭ লাখ ৪২ হাজার টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের ৬ জুলাই সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। ১৩টি খুঁটির ওপরে ১২ স্প্যান বসিয়ে নির্মাণ করা হবে ২৫২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ দশমিক ৮ মিটার প্রস্থের সেতুটি। সুরমা এন্টারপ্রাইজ নামে রাজধানীর একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এ কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০২০ সালের ৫ ডিসেম্বর সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ায় কাজের মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে ২০২২ সাল পর্যন্ত করা হয়। পরে ২০২৪ সালেও এসেও কাজটি শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
কেরানীগঞ্জ এলজিইডি উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শওকত আলী বলেন, সেতুর কাজ ৭০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের অবহেলার কারণে সময়মতো কাজ শেষ করতে পারেনি। এজন্য গত দুমাস আগে সুরমা এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। অবশিষ্ট কাজের জন্য ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে নতুন করে আবারো দরপত্র আহ্বান করে কাজ শুরু করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে সুরমা এন্টারপ্রাইজের পরিচালক মাসুম আলী বলেন, এ বছর ফেব্রুয়ারিতে আমরা কাজটি করব না বলে আত্মসমর্পণ করেছি। কাজটি না করায় এক কোটি টাকা জরিমানা গুনতে হবে। নির্মাণ সামগ্রীর চড়া দাম। কাজটি করতে গেলে চার কোটি টাকা লোকসান হত।
জরিমানা না গুনে কাজটি সময়মতো কেন শেষ করলেন না, এমন প্রশ্নে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এই ঠিকাদার। এ সময় তিনি বলেন, এলজিইডির লোকজনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা করা উচিত। প্রত্যেকের ঢাকায় বড় বড় ভবন আছে। প্রকল্পের লোকজন ও এলজিইডি সংশ্লিষ্টরা বড় বড় ঠিকাদারি কোম্পানির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকার সুবিধা নেয়। যাদের কাছে সুবিধা পায় তাদের কাজের টাকা আগে দেয়। আমাদের টাকা আটকে রাখে। এজন্য আমরা কাজ চালিয়ে যেতে পারিনি। আমাদের কোনো গাফলতি ছিল না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মূল সেতুর ৮টি পিলার নির্মাণ করা হয়েছে। পিলারের ওপর দুটি স্প্যান বসানো হয়েছে। ধলেশ্বরী নদীর উত্তর পাড়েও তিনটি পিলারে দুটি স্প্যান বসানো হয়েছে। তবে নদীর মধ্যখানে নির্মাণ করা পিলার দুটি এমনি পড়ে আছে। নদীর দক্ষিণ প্রান্তে নির্মাণ সামগ্রী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। এসব পাহারায় রয়েছেন সুরমা এন্টারপ্রাইজের পাহারাদার নিমাই শাহা।
নিমাই শাহা বলেন, ১৩ টি খুঁটির মধ্যে মূল সেতুর ৮টি খুটি আমরা করেছি। আমাদের কোম্পানিকে ঠিকমতো টাকা দেওয়া হতো না। তাই আমরা কাজ ছেড়ে দিয়েছি। আমাদের কিছু মালামাল আছে। আমি সেগুলো পাহারা দিচ্ছি।
স্থানীয়রা জানান, সেতুটি হয়ে গেলে মুন্সীগঞ্জ সদর, টঙ্গিবাড়ী, লৌহজংয়ের কয়েকটি ইউনিয়ন ও সিরাজদিখান উপজেলার প্রায় ৫-৬ লাখ মানুষের ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলোতে যাতায়াতে সময়, অর্থ ও ভোগান্তি অনেকাংশে কমে যাবে। সহজ যাতায়াতের জন্য এসব উপজেলায় সম্প্রসারিত হবে ব্যবসা-বাণিজ্য। অথচ ঠিকাদার ও সেতু সংশ্লিষ্টদের গাফলতিতে বছরের পর বছর পার হচ্ছে, কিন্তু সেতুটি নির্মাণ শেষ হচ্ছে না।