শুধু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধ নয়; সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে কঠোর হচ্ছে সরকার। ক্যাম্পের নিরাপত্তা বেষ্টনী কাঁটাতারের বেড়া কেটে ফেলা দুই শতাধিক অংশ দ্রুত মেরামতের নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় কক্সবাজার হিলটপ সার্কিট হাউসে টানা ৩ ঘণ্টা ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায়’ কর্মকর্তাদের এ নির্দেশনা দেন তিনি।
মিয়ানমারের রাখাইনে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির তুমুল লড়াই হচ্ছে। যার কারণে অস্থিরতা বিরাজ করছে সীমান্তে। অনেক রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের গ্রামগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে।
মিয়ানমারের এই সংঘাতের আঁচ এসে পড়ছে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে।
এদিকে ক্যাম্পের পাশে পাহাড়গুলোতে মিয়ানমারের সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো মজুত করছে ভারি অস্ত্র ও গোলাবারুদ আর অন্যদিকে অস্থিরতা তৈরিতে বাড়ছে খুনখারাবি।
এ অবস্থায় কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্তে মতবিনিময় সভা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার রাতে হিলটপ সার্কিট হাউসে একে একে আসতে থাকেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা। তাদের সঙ্গে যোগ দেন স্থানীয় দুইজন সংসদ সদস্য। বৈঠকটি রাত সাড়ে ৮টায় শুরু হয়ে চলে রাত সাড়ে ১১টার পর্যন্ত।
বৈঠক শেষে সাংবাদিক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি এবং কয়েকটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তাদের এই সংঘাতে অস্থিরতার আঁচ এসে পড়ছে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে।
সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, মিয়ানমার থেকে আর কাউকে ঢুকতে দেয়া হবে না। আর এদিক থেকেও কাউকে যেতে দেয়া হবে না। এটা নিয়ে কঠোর অবস্থানে থাকবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩২টি ক্যাম্পে বসবাস করছে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গারা। যাদের নিরাপত্তার জন্য দেয়া হয়েছিল কাঁটাতারের বেড়া; কিন্তু সেই কাঁটাতারের দুইশর বেশি অংশ কেটে ফেলে অবাধে ক্যাম্প ছাড়ছে রোহিঙ্গারা। তাই কাঁটাতারের বেঁড়া কেটে ফেলা দুই শতাধিক অংশ দ্রুত মেরামতের নির্দেশও দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রয়েছে অস্ত্রের ঝনঝনানি। বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। যারা ক্যাম্পে নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত করছে; কিন্তু ক্যাম্পে এসব আর চলবে না। নিয়মিত ক্যাম্পে টহল চলবে। যেখানে এপিবিএন, পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব একসঙ্গে যৌথ টহল দেবে। আর সবসময় প্রস্তুত সেনাবাহিনী। যখন জরুরি প্রয়োজন পড়ে তখন সেনাবাহিনীও কাজ করে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, মূল উদ্দেশ্যে হলো ক্যাম্পকে নিরাপদ করা। এখানে খুনখারাবি, রক্তপাত এসব চলবে না। সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলা হয়েছে যৌথভাবে কাজ করবে। আর ক্যাম্পে থেকে রোহিঙ্গা যাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়তে না পারে তার জন্য কেটে ফেলা কাঁটাতারের বেড়াগুলো সংস্কার ও দ্রুত মেরামতের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় সংসদের হুইপ সাইমুম সরওয়ার কমল, সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান, এপিবিএন প্রধান সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক আনোয়ার হোসেন, ৮ এপিবিএনের অধিনায়ক মো. আমির জাফর, ১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক মো. ইকবাল, ১৬ এপিবিএনের অধিনায়ক হাসান বারী, জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান, পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা।