ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশে চিকিৎসার জন্য গিয়ে খুন হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মরদেহ উদ্ধার করা যায়নি বলে জানিয়েছে কলকাতা পুলিশ। বুধবার পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সিআইডির মহাপরিদর্শক (আইজি) অখিলেশ চতুর্বেদী বলেছেন, আনোয়ারুল আজীমকে খুন করা হয়েছে বলে আমরা গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছি। কিন্তু আমরা তদন্তে এসে শনাক্ত করা ফ্লাটে তার মরদেহ পাইনি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের এমপি আনোয়ারুল আজীম ব্যক্তিগত সফরে এখানে এসেছিলেন। তারপর থেকে তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। ১৮ মে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটে একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন তার পরিচিত গোপাল বিশ্বাস। এই অভিযোগের ভিত্তিতেই আমরা তদন্ত করতে শুরু করি।
তিনি বলেন, এর জন্য ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট থেকে একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠন করা হয়। আমরা ২০ মে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই মামলাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য নির্দেশ পাই। এখানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারও মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে দেখার নির্দেশ দেয়। পরে আজ ২২ তারিখে আমরা গোয়েন্দা তথ্য পাই যে, হয়তো তাকে খুন করা হয়েছে। তারপর আমরা কেস রেজিস্টার করেছি। আর এই কেসের তদন্তভার পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি নিয়েছে। তারপর আমাদের পুলিশ এই ফ্লাটের অবস্থান শনাক্ত করেছে, যেখানে তাকে সর্বশেষ দেখা গেছে।
গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় যান আওয়ামী লীগ দলীয় এই সংসদ সদস্য। এরপর ১৬ মে থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন তিনি। পরে ১৮ মে থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন সংসদ সদস্যের পরিচিত ভারতের বরাহনগরের বাসিন্দা গোপাল বিশ্বাস। এরপর আনোয়ারুল আজিম আনারের খোঁজে তল্লাশি শুরু করে কলকাতা পুলিশ।
অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত যে তথ্য পেয়েছি তাতে সাংসদ আনোয়ারুল আজীম ১২ মে কলকাতায় এসেছেন। পরে এখানে এসে একটি ভাড়া ফ্লাটে ওঠেন। তবে এখানে এখন পর্যন্ত কোনও মরদেহ পাওয়া যায়নি। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, আনোয়ারুল আজীম ১২ মে এখানে এসেছিলেন। তবে তার আগে এসেছিলেন কি না সেটি পরিষ্কার নয়।
তিনি বলেন, এই বিষয়ে আরও কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে সেসব তথ্য প্রকাশ করা যাচ্ছে না। আজীমের মরদেহ খণ্ডবিখণ্ড করা হয়েছে বলে বাংলাদেশের পুলিশ জানিয়েছে, এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, আমরা মাত্রই তদন্তভার গ্রহণ করেছি। আমাদের এসএসএল আছে, ফিঙ্গার প্রিন্ট ব্যুরো আছে, ফটোগ্রাফি টিম আছে, তারা সবগুলো দেখছে। এই বিষয়ে কোনও তথ্য পাওয়া গেলে তা জানিয়ে দেওয়া হবে।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুল আজিম গত ১২ মে সন্ধ্যা ৭টার দিকে কলকাতায় তার পারিবারিক বন্ধু ও কলকাতার স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের সঙ্গে দেখা করতে যান। পরের দিন, ১৩ মে চিকিৎসক দেখাতে হবে জানিয়ে দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে গোপালের বাড়ি থেকে বের হন আনোয়ারুল। সন্ধ্যায় ফিরবেন বলেও জানান তিনি। পরে বিধান পার্কের কাছে কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে থেকে ট্যাক্সিতে উঠেছিলেন তিনি।
চলে যাওয়ার পর সন্ধ্যায় আজিম তার বন্ধু গোপালকে জানান, তিনি দিল্লি যাচ্ছেন এবং সেখানে পৌঁছে তাকে ফোন করবেন। পরে তার সঙ্গে ভিআইপিরা আছেন জানিয়ে বন্ধু গোপালকে ফোন না দেওয়ার জন্য বলেছিলেন। গত ১৫ মে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তায় এমপি আনোয়ারুল গোপালকে বলেন, তিনি দিল্লি পৌঁছেছেন এবং ভিআইপিদের সাথে আছেন। তাকে ফোন করার দরকার নেই। একই বার্তা পাঠিয়ে দেন বাংলাদেশে তার ব্যক্তিগত সহকারী রউফের কাছেও।
১৭ মে আনোয়ারুলের পরিবার তার সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে গোপালকে ফোন করেন। ওই সময় তারা গোপালকে বলেন, তার সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না তারা। পরিবারের পক্ষ থেকে ওই দিনই ঢাকায় থানায় অভিযোগ করা হয়। এরপর থেকে এমপি আনোয়ারুলের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
পশ্চিমবঙ্গের পুলিশের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কী ঢাকা থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ, অপর এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, এই বিষয়ে আমার কোনও মন্তব্য নেই। ওই তিন ব্যক্তির সাথে কী সম্পর্ক ছিল, প্রশ্নের জবাবে অখিলেশ বলেন, আমাদের তদন্তে সব বেরিয়ে আসবে।
অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, ওই সংসদ সদস্য সন্দীপ রায় নামের এক ব্যক্তির ফ্লাটে উঠেছিলেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আবগারি দপ্তরে চাকরি করেন। তিনি ফ্লাট ভাড়া কাকে দিয়েছিলেন, জানতে চাইলে সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা আখতারুজ্জামান নামের এক ব্যক্তিকে। এই আক্তারুজ্জামানের সাথে বাংলাদেশের কোনও সম্পর্ক আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই বিষয়ে আর বিস্তারিত বলা যাবে না। তদন্তের বিষয় আছে।