শেষ ওভারে প্লে–অফে উঠতে চেন্নাইয়ের দরকার ছিল ১৭ রান। প্রথম বলেই ১১০ মিটার দূরত্বের ছয় হাঁকিয়ে মহেন্দ্র সিং ধোনি সেটি প্রায় সম্ভব করে ফেলেছিলেন। কিন্তু সেখানেই শেষ, ধোনি ফিরলেন আরেকটি ছয় হাঁকাতে গিয়ে, পরবর্তী চার বলে মাত্র ১ রান খরচার সঙ্গে তিনটি ডট। তাতেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার চেন্নাইয়ের। বেঙ্গালুরুকে প্লে–অফে তুলে দেওয়া সেই বোলার আর কেউ নন। যশ দয়াল, যিনি গত আইপিএলে রিঙ্কু সিংয়ের হাতে পাঁচ ছক্কা হজম করে জন্ম দেন ট্রাজেডির। ফলে তাকে কত ট্রল–সমালোচনাই না সইতে হয়েছে!
দয়াল গত আসরে খেলেছিলেন গুজরাট টাইটান্সের হয়ে। রানার্স–আপ হয়ে আইপিএল শেষ করা দলটির বিপক্ষে এক ম্যাচে শেষ ওভারে কলকাতার দরকার ছিল ২৮ রান। দয়াল সেই রান আটকাতে পারেননি। তার বলে পাঁচ ছক্কা হাঁকিয়ে জয় তুলে নেন কলকাতার ফিনিশার রিঙ্কু সিং। এরপর তুমুল সমালোচনায় পড়তে হয় দয়ালকে। সেই মনোবেদনা কেবল তাকেই ভেঙেচুরে দেয়নি, দয়ালের পরিবারও হয়েছিল চরম মর্মাহত। বেদনায় মুষড়ে গিয়ে তার মা–ও নাকি নাওয়া–খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন। সেই পরিস্থিতি গতকাল বদলে দিয়েছেন বেঙ্গালুরুর এই পেসার।
যশ দয়ালের দুর্ধর্ষ ২০তম ওভার শেষে কলকাতাই সর্বপ্রথম সামাজিক মাধ্যমে তার প্রশংসা করেছে। বাহবা দিয়েছে এমন প্রত্যাবর্তনের জন্য। যার কাছে পরপর পাঁচ বলে ছক্কা খেয়ে ক্যারিয়ারটাই শেষ হতে বসেছিল দয়ালের, সেই রিঙ্কুও তাকে ভালোবাসায় ভাসিয়েছেন। ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে দয়ালের ছবির সঙ্গে হাততালি ও স্যালুটের ইমোজি দিয়ে রিঙ্কু লিখেছেন, ‘সৃষ্টিকর্তার পরিকল্পনা এমনই ছিল।’ অর্থাৎ রিঙ্কুর জন্য দয়ালকে যে দুর্দিন দেখতে হয়েছে, সেটি মূলত তার হাতে ছিল না। রিঙ্কুও হয়তো অপেক্ষায় ছিলেন, কবে যশের জীবনে এমন সুদিন ফিরবে!
বেঙ্গালুরুর হয়ে এদিন ফিফটি হাঁকানো অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিও ম্যাচসেরার পুরস্কার নিতে নারাজ। কারণ তার মতে পুরো কৃতিত্ব যে দয়ালের। ম্যাচ শেষে ডু প্লেসি বলেন, ‘আমি এই ম্যাচসেরার পুরস্কার উৎসর্গ করছি ইয়াশ দয়ালকে। সে আজ (গতকাল) রাতে যেভাবে বল করেছে তা ছিল অবিশ্বাস্য। শেষ ওভারে এভাবে চাপ নেওয়াটা নতুন কারও (ডেথ ওভারের বোলিংয়ে) জন্য কঠিন, যার কারণেই সেই ম্যাচসেরার পুরস্কার প্রাপ্য।’
শেষ ওভারে দয়ালকে যেভাবে বল করতে বলেছিলেন তা–ও জানান ডু প্লেসি, ‘তাকে বলেছিলাম এই পিচে পেস কমিয়ে বল করতে। সেটাই কাজে এল। বলেছি তার দক্ষতায় আস্থা রাখতে এবং নিজের বোলিং উপভোগ করাটাই হবে শ্রেয়। কারণ অনুশীলনও সে এভাবেই করে আসছে। সে কারণে প্রথম বলটা ইয়র্কার দিতে চেয়েছিল সে, কিন্তু আজ পুরো রাতে ইয়র্কার সেভাবে কাজে আসেনি। সে কারণে তাকে যে পেস কমিয়ে বল করতে বলেছি, সেটাই কাজে লাগল।’
ম্যাচটিতে ৪ ওভার বল করে ৪২ রান খরচায় ২ উইকেট নিয়েছেন দয়াল। তবে তিনি তৃপ্তি পেতে নিজের করা শেষ ওভার নিয়ে। ৭ রান খরচায় এক উইকেট নিয়েই যে বেঙ্গালুরুর জয়ের মূল নায়ক তিনি। এখন হয়তো উত্তর প্রদেশের এই পেসার নিজের পুরোনো সে দুঃসময় ভুলে যাওয়ার একটা উপলক্ষ্য পেয়ে গেলেন!