Headline :
মোল্লারহাট উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ককে দল থেকে অব্যাহতি যমুনা ব্যাংকের অনিয়ম তদন্তে দুদকঃ এমডির সহযোগিতায় সাবেক মন্ত্রী পূত্রদের ৭০ কোটি টাকা লূটপাট বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাত: দূতাবাস নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে হাসান কিরণের ১০ দফা সুপারিশ ছাত্র আন্দোলনে নিহত দিনমজুর পরিবারের পাশে তারেক রহমান ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ ‘শিক্ষার্থীদের গিনিপিগ বানিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা নষ্ট করা হয়েছে মেহেরুন মনসুরের বিলাসবহুল জীবনযাপনের অর্থের মূল উৎস কোথায় ? আটদিনের সফর গড়াচ্ছে আট মাসে, আটকেপড়া নভোচারীরা ফিরবেন যেভাবে চুক্তি বাতিলের পর থেকে লাপাত্তা মিথিলা-অর্পণা

মিল্টন সমাদ্দারের অপকর্ম, প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছেন ভুক্তভোগীরা

Reporter Name / ১৮১ Time View
Update Time : রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩১ পূর্বাহ্ন

‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারের দ্বারা হামলা ও হয়রানির শিকার ভুক্তভোগীদের অনেকে প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছেন। মিল্টন সমাদ্দারের লাঠিয়াল বাহিনীর ভয়ে দীর্ঘদিন প্রকাশ্যে না এলেও নিজেদের সঙ্গে ঘটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এখন পুলিশকে জানাতে চাচ্ছেন কেউ কেউ। দুই ভুক্তভোগীর মামলার পরিপ্রেক্ষিতে অন্যরাও আইনের আশ্রয় নেওয়ার সাহস করছেন।

এদিকে শনিবার তৃতীয় দিনের রিমান্ডে মিল্টন সমাদ্দারকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মিরপুর বিভাগ। ২ দিনের রিমান্ডে তার কাছ থেকে চাঞ্চল্যকার অনেক তথ্য জানতে পেরেছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা। শনিবার তার বিষয়ে ডিবির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হতে পারে। পুলিশের করা মামলার রিমান্ড শেষে অন্য দুই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানোর জন্য আবেদন করা হবে। তদন্তসংশ্লিষ্ট ও ভুক্তভোগীদের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

তথ্যে দেখা গেছে, তিন মামলার মধ্যে দুটির বাদী ২০২০ ও ২০২১ সালে হয়রানির শিকার হন। কিন্তু মিল্টনের লাঠিয়াল বাহিনীর ভয়ে এতদিন কোনো অভিযোগ করতে পারেননি। সম্প্রতি গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রচার হলে এবং পুলিশ মিল্টনকে গ্রেফতার করলে তারা প্রকাশ্যে আসার সাহস পান। তাদের দেখাদেখি আরও বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী সামনে আসতে চাচ্ছেন বলে তারা জেনেছেন।

একটি মামলার বাদী ধানমন্ডির জিগাতলার বাসিন্দা এম রাকিব মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা করেছেন। এ মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে ধানমন্ডি এলাকায় ২ বছরের এক শিশুকে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। তখন ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’-এ ফোন করেন এবং শিশুটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যান। তিনি অভিভাবক হিসাবে ১০ হাজার টাকা দিয়ে শিশুটিকে লালন-পালনের জন্য আশ্রমটিতে রেখে আসেন। মাঝেমধ্যেই ওই শিশুটিকে দেখতে আশ্রমে যেতেন রাকিব। কিছুদিন যাওয়ার পর হঠাৎ একদিন মিল্টন ফোন করে তাকে গালাগাল করেন এবং আশ্রমে যেতে নিষেধ করে ভয়ভীতি দেখান। পরে তিনি জানতে পারেন, শিশুটিকে বিক্রি বা পাচার করে দিয়েছেন মিল্টন।

২০২০ সালে হয়রানির পর এতদিন কেন মামলা করেননি এমন প্রশ্নে রাকিব যুগান্তরকে বলেন, আশ্রমে গিয়ে মিল্টন ও তার বাহিনীর যে অবস্থা দেখেছি তাতে বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে সাহস হয়নি। এছাড়া প্রত্যেকের পরিবার রয়েছে। চাইলেই প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে বলে টিকে থাকা যায় না।

তিনি বলেন, মিল্টনের ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রচার হলে এবং পুলিশ তাকে গ্রেফতার করলে তিনি তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা তুলে ধরেন। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মামলা করেন।

এই ভুক্তভোগী বলেন, শুধু আমি নই, আমার মতো অনেক ভুক্তভোগী ভয়ে সামনে আসতে সাহস পাননি। এখন অনেকে পুলিশকে ঘটনা জানাতে চাচ্ছেন বলে জানতে পেরেছি। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের ইচ্ছা প্রকাশের কথা লিখেছেন। আবার কেউ কেউ গোপনে এসে যোগাযোগ করছেন।

মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে আরেক মামলার বাদী মিরপুর ১ নম্বর মাজার রোডের বাসিন্দা মতিউর রহমান মলি­ক। তিনি হয়রানির শিকার হয়েছেন ২০২১ সালে। মামলায় তিনি ভয়ভীতি ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ করেছেন। 

এজাহারে উল্লে­খ করা হয়- ২০২১ সালের ৩ মার্চ মিরপুর ১ নম্বরের দক্ষিণ বিছিলের রাস্তা থেকে অন্ধ, অসুস্থ এক বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে থানায় জিডি করার পর মিল্টনের আশ্রমে দিয়ে আসেন। পরে সেই বৃদ্ধার আর কোনো খোঁজ পাননি। আশ্রমে খোঁজ নিতে গেলে মিল্টনের লোকজন হামলা করে তাকে ও তার স্বজনদের আহত করে।

এতদিন পরে কেন মামলা করলেন এমন প্রশ্নের জবাবে মতিউর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ২০২১ সালে বৃদ্ধার খোঁজ নিতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তারপরে বিষয়টি নিয়ে সামনে আগানোর সাহস হয়নি। 

এদিকে ডিবির রিমান্ডে বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন মিল্টন সমাদ্দার। তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলেন, মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার মিরপুর মডেল থানায় হওয়া তিনটি মামলার মধ্যে একটির বাদী পুলিশ। জাল মৃত্যুসনদ তৈরির অভিযোগে ডিবি মিরপুর বিভাগের উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ কামাল পাশা বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। এ মামলায় মিল্টন ছাড়াও তার আশ্রমের ব্যবস্থাপক কিশোর বালাকে আসামি করা হয়েছে। মূলত এ মামলায় তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বড় হওয়ার বাসনায় ও নিজেকে খ্যাতিমান করতে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন মিল্টন। দেশে-বিদেশে বেশি সহায়তা পাওয়ার জন্য যেটুকু সেবা দিয়েছেন, তার চেয়ে বেশি ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে প্রচার করেছেন। 

রোগীদের মারধর প্রসঙ্গে বলেন, শান্ত থাকতে না চাইলে মাঝেমধ্যে মারধর করেছেন। তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, বাকি ১ দিনের রিমান্ড শেষে আরও দুই মামলায় গ্রেফতার দেখনোর (শ্যোন অ্যারেস্ট) আবেদন করা হবে। 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *