আইপিএলের চলতি আসরে রানের বন্যা বইয়ে দিচ্ছে দলগুলো। ইতোমধ্যে ৮টি ইনিংসে ২৫০–এর বেশি দলীয় রানের স্কোর দেখা গেছে। সেখান থেকে বেশ দূরে রাজস্থান রয়্যালস। এবার কেবল একবারই তারা দুইশ রানের বেশি সংগ্রহ করেছে। তবে দলীয় সাফল্যে নজর দিলে দেখা যায়– চলতি আসরের সবচেয়ে কার্যকরী দল রাজস্থান। রানবন্যার স্রোতে গা না ভাসিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ খেলায় রাজস্থান এই আইপিএলে যেন উড়ছে। ৯ ম্যাচের মধ্যে ৮টিতেই জিতেছে তারা।
গতকাল (শনিবার) নিজেদের নবম ম্যাচে রাজস্থান হারিয়েছে লখনৌ সুপার জায়ান্টসকে। পয়েন্ট টেবিলে আগে থেকেই শীর্ষে ছিল এর মধ্য সঞ্জু স্যামসনের দলটি। গতকালের ম্যাচ দিয়ে কার্যত সবার আগেই রাজস্থান আইপিএলের প্লে-অফের টিকিটও নিশ্চিত করে ফেলেছে। ঘরের মাঠ একানা স্টেডিয়ামে এদিন আগে ব্যাটিং করে লখনৌ ৫ উইকেটে ১৯৬ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায়। স্যামসনের সামনে থেকে দেওয়া নেতৃত্বে সেই লক্ষ্য সফরকারীরা ৬ বল এবং ৭ উইকেট হাতে রেখেই পেরিয়েছে।
আগে ব্যাট করতে নেমে লখনৌ ওপেনার কুইন্টন ডি কক পেসার ট্রেন্ট বোল্টকে প্রথম দুই বলে চার মেরে দারুণ শুরু করেছিলেন। যদিও এমন শুরুর পরও সেই ইনিংস দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। তৃতীয় বলেই ডি ককের (৮) স্টাম্প ভেঙে দেন বোল্ট। নিউজিল্যান্ড পেসারের বল বুঝতেই পারেননি দক্ষিণ আফ্রিকান তারকা। পরের ওভারে আরও একটি উইকেট হারায় লখনৌ। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করে দলকে জেতানো মার্কাস স্টয়নিস এদিন ফিরেছেন রানের খাতা খোলার আগেই। পেসার সন্দীপ শর্মার সুইং তিনি বুঝতেই পারেননি।
বিপদের মুখে লখনৌর হাল ধরেন অধিনায়ক লোকেশ রাহুল এবং দীপক হুদা। লখনৌর পিচ ছিল মন্থর। বল পড়ে খুব ভালভাবে ব্যাটে আসছিল না। ফলে এই পিচে বড় রান হওয়ার সম্ভাবনা যে নেই, সেটাই বোঝা যাচ্ছিল। রাজস্থানের বোলাররাও নিয়ন্ত্রিত বল করছিলেন। তার মধ্যেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে রান করতে থাকেন রাহুল এবং হুদা। ৩১ বলে ৫০ করে দীপক ফিরে গেলেও খেলছিলেন রাহুল। তিনি টিকে ছিলেন ১৮তম ওভার পর্যন্ত। ফেরার আগে লখনৌ অধিনায়ক আটটি চার এবং দুটি ছক্কায় ৪৮ বলে ৭৬ রান করেন। যাতে ভর করে নির্ধারিত ওভারে ১৭৬ রানের পুঁজি পেয়ে যায় লখনৌ।
রাজস্থানের হয়ে সবচেয়ে ভালো ইকোনমি নিয়ে সর্বোচ্চ ২ উইকেট নেন সন্দীপ। রবিচন্দ্রন অশ্বিনও চার ওভারে ৩৯ রান দিয়ে একটি উইকেট পান। চার ওভারে ৪২ রানে একটি উইকেট পেয়েছেন আবেশ খান। ওভারপ্রতি দশের ওপর রান দিয়েও কোনো উইকেট পাননি যুজবেন্দ্র চহাল।
রানতাড়ায় খেলতে নেমে পাওয়ার প্লে-র সুবিধা পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছে রাজস্থান। লখনৌর পিচ পাটা না হওয়ায় স্ট্রোক খেলতে অসুবিধা হচ্ছিল। অন্যান্য ম্যাচে পাওয়ার প্লে-তে যে দাপট দেখান যশস্বী জয়সওয়াল ও জস বাটলাররা, সেটা শনিবার লখনৌতে দেখা যায়নি। ফলে দ্রুত রান তুলতে যেন অসুবিধাই হচ্ছিল। কিন্তু তবুও ৬ ওভারে ঠিকই তারা ৬০ রান তুলে ফেলে। তবে তার ঠিক আগেই ষষ্ঠ ওভারের পঞ্চম বলে বাটলারকে ফেরান যশ ঠাকুর। তার বল ডান দিকে সরে খেলতে গিয়ে বাটলারের (৩৪) লেগ স্টাম্প উড়ে যায়।
পরের ওভারের প্রথম বলে ফেরেন জয়সওয়ালও (২৪)। স্টয়নিসের বলে রবি বিষ্ণয়ের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। নবম ওভারে ফেরেন ফর্মে থাকা রায়ান পরাগও (১৪)। এভাবে পরপর তিনটি উইকেট হারিয়ে আচমকাই একটু চাপে পড়ে যায় রাজস্থান। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলেন অধিনায়ক স্যামসন এবং ধ্রুব জুরেল। ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পর থেকে জুরেলের ব্যাট থেকে বড় রান দেখা যাচ্ছিল না। কিন্তু প্রয়োজনমতো কাজে এলো তার ইনিংস। ম্যাচ জেতানো অর্ধশতরান করলেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, সঞ্জুর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে জুটি বেঁধে দলকেও জেতালেন। দুজন মিলে চতুর্থ উইকেটে ১২১ রানের অবিচ্ছেদ্য জুটি গড়েন। শেষ পর্যন্ত স্যামসন ৩৩ বল ৭টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৭১ এবং ৩৪ বলে ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫২ রানে অপরাজিত ছিলেন জুরেল। তাতেই জয় নিশ্চিত হয়ে যায় রাজস্থানের।