লেকের ধারে বসে কেউ বাদাম চিবাচ্ছেন, কেউবা আবার আইসক্রিমের স্বাদ নিচ্ছেন। কেউ সিঁড়িতে বসে লেকের জলে পা ভেজাচ্ছেন। সঙ্গে আসা শিশুদের কিনে দেওয়া হচ্ছে বেলুন ও নানা মুখরোচক খাবার। অন্যদিকে পার্ক ও উদ্যানগুলোতে ছিল মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি। বিকেলের সময়টুকু মুক্ত পরিবেশে কাটাতে রাজধানীবাসী এভাবেই ছুটির দিন উদযাপন করছেন।
শুক্রবার (১২ এপ্রিল) ঈদের দ্বিতীয় দিন হাতিরঝিল, রমনা পার্ক এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। নগরবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোটি মানুষের এই শহরে বিনোদনের তেমন উন্মুক্ত জায়গা নেই। তাই এসব জায়গাই এখন বিনোদনের প্রাণকেন্দ্র।
হাতিরঝিল ঘুরে দেখা গেছে, হাতিরঝিলের সড়কে গাড়ির ধীরগতি। রাস্তার পাশে পার্কিং করে রাখা আছে গাড়ি ও মোটরসাইকেল। কেউ দৌড়ে রাস্তা পার হচ্ছেন। লেকের পাড়ে বসে কেউ আড্ডা দিচ্ছেন, পানিতে পা ভেজাচ্ছেন। বেঞ্চগুলোতে বসে গল্প করছেন অনেকেক। হাতিরঝিলের র্যাম্পগুলোতে সেলফি তোলার ধুম নতুন প্রজন্মের। মুখরোচক খাবারের মধ্যে ফুচকা চটপটি, পাপড় ও হাওয়াই মিঠাইয়ের দোকানগুলোতে মানুষের ভিড় ছিল বেশ।
বিকেলে হাতিরঝিলে কথা হয় শরিফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঢাকা শহরে আসলে উন্মুক্তভাবে ঘোরার তেমন কোনো জায়গা নেই। এই একমাত্র হাতিরঝিলেই উন্মুক্তভাবে আড্ডা দেওয়া যায়। যেখানে রয়েছে গাছের ছায়া, বাতাস ও পানির কলতান।
তিনি আরও বলেন, আলো, বাতাস, পানি থাকলেও এখানে সবচেয়ে বেশি রয়েছে শব্দ দূষণ। যেহেতু আশেপাশে কোথাও ঘোরার তেমন কোনো জায়গা নেই, তাই এটি সহ্য করেই এখানে আসতে হয়। ঈদের ছুটি তো শেষ হয়ে এলো। তাই পরিবারের সঙ্গে একটি বিকেল কাটাতেই এখানে আসা।
রমনা পার্ক ঘুরে দেখা গেছে, সবুজ ঘাসের ওপর বসে সবাই আড্ডা দিচ্ছে। কেউ নিয়ে এসেছেন ছোট শিশুদের সঙ্গে করে। কারো আবার কোলে শিশু। শিশুরা যারা একটু একটু করে হাঁটতে পারে তারা এই সবুজ পেয়ে যেন স্বর্গরাজ্যে ফিরে গেছে। তারা দৌড়াদৌড়ি করছে ঘাসের ওপর। কে কোন পরিবারের শিশু, তার যেন বিভেদ নেই সেখানে। সমবয়সী পেলেই হাসি খুশিতে মেতে উঠছে তারা। শিশুদের হাতে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন আকারের-বর্ণের বেলুন।
বেইলি রোড থেকে শিশুদের নিয়ে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে রমনা পার্কে এসেছেন আরিফা ইসলাম রাখি। তিনি বলেন, বাচ্চারা একটু সবুজ ঘাস পেলে উচ্ছ্বসিত হয়। তাই ছুটির বিকেলে তাদেরকে নিয়ে এখানে এসেছি। শুধু যে আজকে এসেছি তা নয়, সময় পেলে ওদেরকে এখানে নিয়ে আসি। আসলে ঢাকা শহরে এতটা সবুজ আর পাওয়া যায় না।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে দেখা যায়, উদ্যানের শিখা চিরন্তনের সামনে মানুষের ব্যাপক ভিড়। দাউ দাউ করে জ্বলা আগুনের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলায় মত্ত হয়েছেন তারা। এছাড়া পুরো উদ্যানজুড়ে সবুজ ঘাসের ওপর শুয়ে বসে সময় কাটাচ্ছেন তরুণ-তরুণীরা।
উদ্যানে আসা রফিকুল ইসলাম রুবেল বলেন, দুপুরের পর প্রচণ্ড রোদ ছিল। বিকেলে বাসা থেকে বের হয়ে এখানে এসেছি একটু ছায়ায় বসতে। ঠান্ডা বাতাস আর ছায়া মন-প্রাণ জুড়িয়ে দিয়েছে।
মূলত রাজধানীতে কয়েকটি উন্মুক্ত জায়গা আছে আড্ডা দেওয়ার। যা নগরবাসীর জন্য অপ্রতুল। তাই নাগরিকরা বিনোদন সুবিধা বাড়ানোর জন্য আরও উন্মুক্ত পার্ক-উদ্যান তৈরির দাবি জানিয়েছেন।